শুক্রবার বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু কংগ্রেসকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন কোচবিহার থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিতে। কিন্তু শনিবার প্রত্যাহারের শেষ সময় পেরিয়ে গেল। প্রার্থী তুলে নিল না কংগ্রেস। ফলে বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোটভঙ্গ হল অন্তত কোচবিহারের ময়দানে। আরও অন্তত একটি আসনে এমন সম্ভাবনা প্রবল।
কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেই লোকসভা ভোটের দিকে এগোচ্ছে বামেরা। ফ্রন্টের প্রথম প্রার্থিতালিকাতেই কোচবিহারে ফরওয়ার্ড ব্লকের নীতীশচন্দ্র রায়ের নাম ঘোষণা করা হয়। তার পর আচমকাই কোচবিহার আসনে প্রার্থী দিয়ে দেয় কংগ্রেস। নাম ঘোষণা হয় পিয়া রায়চৌধুরীর। শুক্রবার কোচবিহার নিয়ে কংগ্রেসকে বার্তা দিয়েছিলেন ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করব, তা হবে না। কংগ্রেসের কাছে আবেদন করব, আপানারা কোচবিহার নিয়ে ভাবুন।’’ কোচবিহারে প্রথম দফায় (১৯ এপ্রিল) ভোটগ্রহণ। সেখানে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল শনিবার। কিন্তু বিমানের অনুরোধ রাখেনি কংগ্রেস।
প্রার্থিপদ প্রত্যাহার না-করে উল্টে বামেদের ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছেন জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী পিয়া রায়চৌধুরীর নির্বাচনী এজেন্ট তথা তাঁর স্বামী বিশ্বজিৎ সরকার। তিনি জানান, জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বা সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব সীতারাম ইয়েচুরির পক্ষ থেকে তাঁর কাছে কোনও রকম মৌখিক বা লিখিত নির্দেশিকা আসেনি। তাই তাঁরা প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করছেন না।
কংগ্রেস প্রার্থিপদ প্রত্যাহার না করাকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়ে কোচবিহারের বাম নেতা মহানন্দ সাহা জানান, তাঁদের দলীয় নেতৃত্ব কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলার পরেও কংগ্রেস তাদের প্রার্থী পদ প্রত্যাহার না-করায়, একদিকে যেমন মানুষ বিভ্রান্ত হবেন, ঠিক তেমনই জোট বিরোধীরা শক্তিশালী হবে।
যে বাম দলের প্রার্থী দেওয়া আসনে পরে প্রার্থী দিল কংগ্রেস, সেই ফরওয়ার্ড ব্লকের মুখে অবশ্য ক্ষোভের বদলে উচ্ছ্বাসেরই সুর। কারণ, কোচবিহারের তুলনায় পুরুলিয়া আসনে ফব-র নজর এবং আগ্রহ বেশি। কংগ্রেসকে করা বিমানের অনুরোধ প্রসঙ্গে দলের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা তো বিমানদাকে বলিনি অনুরোধ করুন। উনি করেছিলেন। কংগ্রেস তাঁকেও মান্যতা দিল না। এটা অসম্মানজনক।’’ পুরুলিয়া আসন নিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে কংগ্রেসের টানাপড়েন চলছে। ওই আসনে কংগ্রেস নেপাল মাহাতোকে প্রার্থী করেছে। ফরওয়ার্ড ব্লক আবার ওই আসন ছাড়তে রাজি নয়। এ নিয়ে সিপিএমের সঙ্গেও ফরওয়ার্ড ব্লকের সংঘাত চলছে। কিন্তু কোচবিহারকাণ্ডের পর ফ্রন্টের ভিতরেও ফরওয়ার্ড ব্লকের গলা তুলে কথা বলার সুযোগ হয়ে গেল বলে মনে করছেন নেতারা।