বাংলার নিজের খবর,বাঙালির খবর

বিএসএফের দাদাগিরিতে নাজেহাল সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের। অভিযোগ গ্রামবাসীদের

কোথাও আঙুল তুলে শাসানি, কোথাও আবার জমিতে চাষ করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ, গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয় পড়াশুনার ক্ষেত্রেও তৈরি করছে প্রতিবন্ধকতা, এমনটাই অভিযোগ কোচবিহার মেখলিগঞ্জ মহকুমার কুচলিবাড়ী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকার গ্রামবাসীদের। সেই স্বপক্ষে বেশ কিছু ছবি ইতিমধ্যেই তুলে ধরা হয়েছে প্রশাসনের কাছে, অভিযোগ একাধিকবার প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করা সত্ত্বেও বিএসএফের দাদাগিরি বন্ধ হচ্ছে না।

 

 

স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক পরেশ অধিকারী মন্তব্য করে বলেন, বিএসএফের দাদাগিরি অনবরত চলছে। এতে প্রাণ ওষ্ঠাগত গ্রামবাসীদের। এমনকি ভারতীয় ভূখণ্ড হওয়া সত্ত্বেও সেখানে জনপ্রতিনিধি গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যদের যেতে বাধা দেওয়া হয় বিএসএফের তরফ থেকে। একাধিকবার জেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠক করেও কোন সূরা হয়নি। ভুক্তভোগী কয়েক হাজার গ্রামবাসী।

সীমান্ত ঘেরা মেখলিগঞ্জ মহাকুমা, কাঁটাতারের ওইপারেও রয়েছে ভারতীয় ভূখণ্ড। এখানে গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে, রয়েছে প্রচুর ছাত্র ছাত্রী। গ্রামের সাধারণ কৃষকরা রয়েছেন, অভিযোগ বিএসএফের আধিকারিকরা গ্রামে ছাত্রছাত্রীদের ওপরে সুরক্ষার কথা বলে অত্যাচার চালায়। বারংবার তাদের চেকিং করা হয়।

 

 

এমনকি অভিযোগ আরো গুরুতর, স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ভীমবাবু জানান, উপযুক্ত প্রমাণ পত্র থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাঁটাতারের ভেতরে থাকা আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করতে পারেন না বাইরে থেকে আসা পরিবার পরিজনেরা। ২০১৮ সালের পর থেকে আরও মারাত্মক হয়েছে এই ব্যবস্থা। নিজেদের জমিতে চাষাবাদ করতে গেলেও শাসানির সামনে পড়তে হয় বিএসএফের। এমনকি বাড়িঘর মেরামত করার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি করে বিএসএফ জওয়ানরা। বাইরে থেকে নির্মাণ সামগ্রী আনতে দেন না তারা। বিয়ে বা অনুষ্ঠান বাড়ি হলে তো কথাই নেই, চেকিং এর নামে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কাঁটাতারের বাইরে।

 

 

স্থানীয় গ্রামবাসী মনসুর আলী জানাচ্ছেন, তাদের বাড়িতে ঈদ উপলক্ষে বেশ কিছু আত্মীয়-স্বজন এসেছিলেন, কিন্তু পর্যাপ্ত কাগজ থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে প্রবেশ করতে দেয়নি বিএসএফ জওয়ানরা। যদিও বা এই মর্মে বিএসএফের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এই বিষয়ে কোনো রকম মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন স্থানীয় কোম্পানি কমান্ডেন্ট। সবথেকে বড় অসুবিধা সন্মুখীন হতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের। চেকিং এর নামে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাদের। এমনকি একাধিকবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কোন লাভ হয় না।

 

 

সমস্ত জামাকাপড় খুলে, বই খাতার ব্যাগ খুলিয়ে কাঁটাতারের ভেতরে ঢোকার সময় এবং কাঁটাতারের ভেতর থেকে বের হওয়ার সময় চেক করা হয় ছাত্র-ছাত্রীদের। ছাত্রীদের জন্য মহিলা বিএসএফ কর্মী এবং আলাদা ব্যারিকেট করা ঘর থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পড়াশোনার জন্য, স্কুলে যাওয়ার জন্য দেরি হয়ে যায় তাদের। ইতিমধ্যেই একটি ছবি সামনে উঠে এসেছে, চাষাবাদ করতে থাকা এক কৃষক বন্ধুর সাথে বিএসএফের বাক-বিদন্ডা। আরেকটি ছবিতে পরিষ্কার দেখা যায় ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কতটা নির্মম আচরণ করেন বিএসএফ জওয়ানরা।

 

 

যদিও বা এইসবের বিরুদ্ধে একাধিকবার জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করেছেন স্থানীয় বিধায়ক। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি বলে জানান তিনি। পরেশ বাবু আরো বলেন, জেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, এবং বিএসএফ আধিকারিকদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। তারা একাধিকবার আশ্বস্ত করলেও কোন লাভ হয়নি। অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধান চাইছেন সীমান্তবর্তী এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। নচেৎ বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটতে বাধ্য হবেন তারা বলে জানান গ্রামবাসীদের একাংশ।

মিডিয়া
16,985FansLike
2,458FollowersFollow
61,453SubscribersSubscribe
Must Read
Related News