নদিয়া;বঙ্গভঙ্গ রুখতে এবং দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে তরান্বিত করতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেসময় রাখীকেই অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন৷ ঠিক সেই আঙ্গিকেই নদী বাঁচানোর দাবীকে তরান্বিত করতে এবার পরিবেশকর্মীরা নদীতে কচুরিপানার রাখি ভাসিয়ে সুরধুনী নদীর উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত সংস্কারের দাবী জানালেন৷ একই সাথে নদীর ধারের গাছকে তালপাতার রাখী পরিয়ে গাছকেও আপন করে নেন পরিবেশপ্রেমীরা৷ উল্লেখ্য নদীয়ার শান্তিপুরের সুরধুনী নদীর নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা রয়েছে অক্ষরে অক্ষরে। কিন্তু সেই নদী আজ সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে। জানা যায় প্রায় ৫৫০ বছর আগে এই নদীপথে নদীয়ার শান্তিপুরের বাবলা অদ্বৈত আচার্যের আশ্রমে আসতেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু,, সেখানেই আধ্যাত্মিক পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন তিনি।
সাধুসন্ত শিষ্যগণ সহ প্রতিদিনই অসংখ্য ভক্তবৃন্দের আনাগোনা লেগেই থাকতো। তবে সেই সময় একমাত্র নদীপথ মানে এই সুরধুনি নদী, এরপর সময়ের পরিবর্তনে নদীর প্রবাহ কমতে শুরু করে। পড়ে যায় বিভিন্ন জায়গায় পলি, আর সেখানে ই চাষযোগ্য হয়ে ওঠে। যুগের পরিবর্তনে দখল শুরু হয় নদীটির, ঐতিহ্যবাহী এই নদী সারা দেশ বিদেশের কাছে এক অন্যতম নাম ছিল। কেনই বা থাকবে না শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তিনি যে বারবার আসতেন এই নদীপথেই। বর্তমান সময়ে নদীর পাশে অবস্থিত অদ্বৈত আচার্যের আশ্রম, এখন পিঠস্থান এ পরিণত হয়েছে। সারা বছর বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং নাম সংকীর্তন লেগেই থাকে। দূর দূরান্ত থেকে প্রচুর ভক্তবৃন্দদের আনাগোনা হয়।
অদ্বৈত আচার্যের বংশধর ছিলেন বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী, আর সেই বংশধর এখন শান্তিপুর বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক ব্রজ কিশোর গোস্বামী। যদিও তিনি এখন পীঠস্থান এর সমস্ত কিছু দেখাশোনা করেন।,, এতো গেল অদ্বৈত আচার্যের ইতিকথা, কিন্তু নদীর পরিণতি দিন দিন দখলের দিকে চলে যাওয়ায় সোচ্চার হয় পরিবেশকর্মীরা, একাধিক লড়াইয়ের পর রাজ্য সরকারের তৎপরতায় নদী সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল গত এক বছর আগে, কিন্তু সম্পূর্ণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। আজকের এই রাখি বন্ধনের দিনে পরিবেশ কর্মীরা সুরধূনী নদীতে গিয়ে আবার নদীকে পুনর্জীবিত করতে উদ্যোগী হন। নদীতে কচুরিপানার রাখি ভাসিয়ে তাদের একটাই বার্তা নদীর উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত সংস্কারের উদ্যোগ যদি রাজ্য সরকার নেয় তাহলে আবার নদীর ফিরে পাবে প্রাণ।