বাংলার নিজের খবর,বাঙালির খবর

অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত। পড়ুন প্লীজ

গত পনেরো বছরে মাননীয়ার শাসনকালে পশ্চিমবঙ্গে এক শ্রেণীর মানুষ একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তারা হলেন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত। ওই যারা মাস্টার্সের পর পিএইচডি করে কলেজে চাকরি পাবার আশা রাখে, যারা সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুত হয়, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে আইটিকুলি হতে চায়, নাহলেও মোটামুটি একটা সাদা কলারের চাকরির প্রত্যাশা রাখে। এরা খুব চট করে একটা চপের দোকান দিতে পারে না। কিংবা সিন্ডিকেটে নাম লিখিয়ে সিমেন্ট-বালি বেচতে পারে না। ওই কাজগুলোও নিঃসন্দেহে সুস্থ কাজ কিন্তু শিক্ষিত মধ্যবিত্তের যাকে বলে scheme of things এর বাইরে। সত্যি বলতে কি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার কিংবা স্বাস্থ্যসাথী (আরও যা যা সাথী আছে) তাতে তাদের বিশেষ সুরাহা হয়না কারণ ওই স্কিমগুলো নিম্নমধ্যবিত্তের কথা ভেবে বানানো।

তো এই শ্রেণীটার গত পনেরো বছরে এসএসসি সিএসসি বানের জলে ভেসে যাবার পরে, মোড়ে মোড়ে স্টেজ বেঁধে জিঙ্গালালা দেখতে দেখতে, অটোওয়ালার চোখ রাঙানি সইতে সইতে, সংস্কৃতির নিম্নগতি মাপতে মাপতে, প্রোমোটারকে জলের দরে বাস্তুভিটে বেচতে বেচতে, পিঠ একেবারে দেওয়ালে ঠেকে গেছে। ভোটের অঙ্কে এদের গুরুত্ব কম (নগণ্য) বলে এবং জন্ম-কর্মগত কারণে এদের সঙ্গে কোনওরকম মিল না থাকায় মাননীয়া এদের পাত্তা দেবার প্রয়োজন বোধ করেননি। উনি এও জানেন যে এই শ্রেণী প্রকাশ্যে তাঁর কবিতাপ্রতিভা নিয়ে, শিল্পীসত্ত্বা নিয়ে খিল্লি করে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শিক্ষিত এবং ওঁকে অশিক্ষিত বলে।

কিন্তু শুধুমাত্র সেইজন্যেই কি মাননীয়া এদের উপেক্ষা করেন? তা নয়। উনি জানেন যে এই শ্রেণীর সরকারের ওপর, প্রশাসনের ওপর নির্ভরতা খুব কম। ওরা নিজেদের মতো পড়াশোনা করে যেমনতেমন একটা চাকরিবাকরি জুটিয়ে নেবে। দরকারে অন্য রাজ্যে, অন্য দেশে গিয়েও। সরকারি হাসপাতালে বেড না পেলে বেসরকারি হাসপাতালে চলে যাবে। সরকারকে ট্যাক্স দেবে কিন্তু কোনও কিছুর জন্য পার্টি অফিসের দোরে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকবে না। ফলে এদের ব্যবহার করার সুযোগ খুব কম। তাই ক্রমাগত নিম্ন এবং উচ্চবিত্ত (সিনেমাওয়ালা ইত্যাদি) এই দুই শ্রেণীকেই উনি প্রশ্রয় দিয়ে গেছেন।

আরজিকর কাণ্ডের আন্দোলন এত বড় আকার ধারণ করল কীভাবে তা নিয়ে শাসকদলে এক ধরনের অবিশ্বাস রয়েছে। সত্যি সত্যিই এত বড় মাপের স্বতঃস্ফূর্ত অরাজনৈতিক আন্দোলন এতদিন ধরে চালানো সম্ভব মাননীয়াও সেটা মানতে পারছেন না। কারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পালটা মার দিতে না পারাকেই পাথেয় করে এতগুলো বছর ধরে তিনি কলকাতাকে লন্ডন বানিয়েছেন।

এই আন্দোলনে আর কিছু হোক না হোক, অন্তত সংখ্যার নিরিখে আর গলার জোরে মধ্যবিত্ত যে পিছিয়ে পড়তে পড়তেও কলকাতা দখল করতে পারে বা বলা ভালো বেদখল হয়ে যাওয়া কলকাতাকে রিক্লেম করতে পারে, মাননীয়াকে সেটুকু বোধহয় বোঝানো যাবে।

মিডিয়া
16,985FansLike
2,458FollowersFollow
61,453SubscribersSubscribe
Must Read
Related News