টিভি, মোবাইল ফোনের আগ্রাসনে শহরের অধিকাংশ বাড়িতে রেডিও নামক যন্ত্রটাই উধাও। থাকলেও সেটার অবস্থা কেমন, সেই খোঁজ রাখেন না কেউই। তবে মহালয়ার ব্যাপার অবশ্য আলাদা। পিতৃপক্ষের শেষ ও দেবীপক্ষের সূচনার সূর্যোদয়ে রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় মহিষাসুরমর্দিনী না শুনলে এখনও বাঙালির পুজো শুরু হয় না। ইতিমধ্যেই সেজন্য লাইন পড়েছে জলপাইগুড়ি শহরের বিভিন্ন রেডিও সারাইয়ের দোকানে। শুধু সারাই নয়, অনেকে রেডিও কিনছেন শুধুমাত্র মহালয়া শোনার জন্যই।
এই অবস্থায় দম ফেলার ফুরসত নেই এই রেডিও সারাইয়ের মেকানিকদের। শেষ কয়েকদিনে প্রায় ১৫০-এরও বেশি রেডিও সারিয়েছেন এই কারিগররা। মাষকলাইবাড়ির রেডিও মেকানিক রঞ্জন দাসের কথায়, ‘আধুনিক রেডিও যেমন আসছে ঠিক করানোর জন্য, তেমন ৪০-৫০ বছর পুরোনো রেডিওর মডেলও আসছে। সারাবছর এগুলো বাড়িতে অকেজো হয়ে পড়ে থাকলেও এই সময়টা রেডিও সারাইয়ের তাগিদ বাড়ে শহরের মানুষের। বিশেষ করে বয়স্কদের।’ দিনবাজারের রেডিও সারাইয়ের কারিগর ভজন দত্ত জানান, এবছর ইতিমধ্যেই ৭০টির বেশি রেডিও সারাই করেছেন।
এবছর এখন পর্যন্ত রেডিও সারাইয়ে সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় বর্ষীয়ান গৌতম দাস। বিগত কিছু বছরের মধ্যে এটা প্রায় রেকর্ড তাঁর কাছেও। রেডিও যে ফের পাল্লা দিয়ে এগিয়ে আসছে টিভি-মোবাইলের জমানায় তা দেখে কিছুটা আবেগপ্রবণ গৌতম। তাঁর কথায়, ‘প্রায় ৫০ বছর ধরে রেডিও ও টেপরেকর্ডার সারাইয়ের কাজ করছি। আধুনিক সরঞ্জাম এলেও এখনও এত মানুষ যে রেডিওর ওপর ভরসা রাখছেন তা দেখে খুব ভালো লাগছে। প্রতিবারই কিছু মানুষ রেডিও মেরামতির জন্য মহালয়ার আগে দোকানে আসেন। কিন্তু এবার সংখ্যাটা অনেক বেশি।’ মহালয়ার আগে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই তাঁর বিশ্বাস।
আশ্চর্যজনকভাবে বয়স্কদের সঙ্গে বর্তমান যুগের বেশকিছু তরুণও এবার হাজির রেডিও সারাই করাতে। তাঁদের মধ্যে একজন কলেজ পড়ুয়া ঋক দত্তর বক্তব্য, ‘আমি দাদু-ঠাম্মার কাছে অনেক গল্প শুনেছি মহালয়ার সকালের। রেডিও কীভাবে সকলকে এক সূত্রে বাঁধতে পারে, সেটা জানতেই দাদুর পুরোনো রেডিওটা ঠিক করাতে এসেছি। ওইদিন সকালে বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে শুনব মহিষাসুরমর্দিনী। একথা ভেবেই বেশ আনন্দ হচ্ছে।’ আর এর জেরেই নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন শহরের রেডিও সারাইয়ের কারিগররা।