কালীপুজো উদ্বোধনে গিয়ে এই প্রসঙ্গ তুলেছিলেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের বেশ কয়েকটি লোকসভা আসন আছে, যেখানে অবাঙালি ভোট ফ্যাক্টর। এর মধ্যে আসানসোল, ব্যারাকপুর আসন তৃণমূল কংগ্রেস জিতলেও দার্জিলিং লোকসভা আসন হেরে যায় তৃণমূল কংগ্রেস। আবার শহরের কাছের বেশ কয়েকটি লোকসভায় অবাঙালি অধ্যুষিত ভোট পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। যেমন হাওড়া, শ্রীরামপুর, হুগলি লোকসভা আসন।(হুগলি লোকসভা কেন্দ্র – ভদ্রেশ্বর পুরসভার ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০টি তৃণমূলের দখলে। ভোট শতাংশের বিচারে অবাঙালি ২২, মুসলিম ২০ ও ওড়িয়া ৩ ও তামিল ভোট ২ শতাংশ।)
শ্রীরামপুর লোকসভার রিষড়া পুরসভা এলাকা ভোট বিচারে ৬০ শতাংশ অবাঙালি ও সংখ্যালঘু ২০ শতাংশ। গত ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে রিষড়ার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে বিজেপি লিড নিয়েছিল। কিন্তু বিধানসভায় অনেকটা জমি উদ্ধার করে তৃণমূল। ২০২৪ সালেও তৃণমূল ভাল ফল করেছে। উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা তৃণমূল কংগ্রেস জিতলেও বেশ কয়েকটি জায়গা যেখানে অবাঙালিরা বেশি থাকে সেখানে বুথ পিছু ভোট কম পড়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেক্সপীয়র সরণী এলাকাতে দাঁড়িয়ে যেখানে মন্তব্য করেছেন সেখানেও এই ছবি। অতীতে দেখা গিয়েছিল এই সব বহুতল বিস্তৃত এলাকায় বিশেষ নজর দিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। আবার মাণিকতলা বিধানসভা উপনির্বাচন কেন্দ্র যেখানে অবাঙালি ভোটার আছে সেখানে লোকসভায় পিছিয়ে গেলেও, বিধানসভায় জয় আসে ওই নির্দিষ্ট এলাকায়। এরকম বহু উদাহরণ আছে রাজ্য জুড়ে।
দলের শীর্ষ নেত্রীর তরফে এর কারণ অনুসন্ধানের প্রসঙ্গ তোলায় নড়েচড়ে বসেছে সাংগঠনিক পদাধিকারীরাও।
১) সামনের বিধানসভাকে মাথায় রেখে প্রয়োজনে এই বিশেষ এলাকায় আরও, আরও বেশি সময় দেওয়া।
২) লোকসভা হোক বা বিধানসভা বা স্থানীয় ভোট যে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিকে সারাক্ষণ হাতের সামনে পাচ্ছেন, তাকে নির্বাচিত করুন, এই বার্তা বারবার করে তুলে ধরা।
৩) এলাকার নানা অনুষ্ঠানে তাদের সঙ্গে বেশি করে সংযোগ।
৪) বহুতলে যাতায়াত বাড়ানো, প্রয়োজনে তাদের কমিউনিটি প্রোগ্রামে যাতায়াত
৫) রাজ্যের বা শহরের বাসিন্দাদের জন্য সরকার কী কী কাজ করেছে তার হিসাব তথ্য সহ তুলে ধরা। শুধু ভোটের সময় এই তথ্য দেব, বাকি সময় নয় তা যেন না হয়।
৬) স্থানীয় স্তরে যে নেতার সঙ্গে যোগাযোগ বেশি তাকে বেশি করে ব্যবহার করা। খানিকটা ‘আমাকে ডাকলেই পাবেন।’বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি কার্যত শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই অ-বাঙালি এলাকায় ভোট কম পাওয়া আটকাতে কোমর বেঁধে নেমে পড়ার প্রস্তুতি শাসক দলের অন্দরেও।
হিন্দিভাষী বা ভিনরাজ্যের ভোটার উপস্থিতি -ভবানীপুর, কলকাতা বন্দর, মাণিকতলা, জোড়াসাঁকো। এছাড়া লোকসভা ভিত্তিক – আসানসোল, বর্ধমান-দুর্গাপুর,ব্যারাকপুর, হাওড়া, দমদম, পুরুলিয়া (স্বল্প), মালদহ (স্বল্প), শিলিগুড়ি।রাজ্যে গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে হিন্দিভাষী মানুষের সংখ্যা ৷ ২০০১ সালের জনগণনার রিপোর্ট অনুসারে এ রাজ্যে হিন্দিভাষী মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫৮ লক্ষ ৷ যা গত কয়েক বছরে অনেক বদলে গিয়েছে ৷ জনগণনা কর্তৃপক্ষ রাজ্যে হিন্দি ও উর্দুভাষী মানুষের বসবাসের সঠিক সংখ্যা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করেনি৷ তবে ভোটার তালিকা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, রাজ্যে ভোটারদের মধ্যে হিন্দি ও উর্দুভাষী মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে ৷