দ্রুত পদক্ষেপের পথে হাঁটল রাজ্য সরকার। প্রসঙ্গত, বর্তমানে সারা বাংলাজুড়ে চলছে আবাসের যাচাই পর্ব। তা করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে আবেদনকারীর নিজস্ব জমি নেই। নবান্নে এই খবর পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই ধরনের ভূমিহীনদের জন্যও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাথার উপর পাকা ছাদ সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে তাঁদের জমির পাট্টা প্রদান করে বাড়ি তৈরির টাকা তুলে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনাতেও ভূমিহীনদের জন্য জমির ব্যবস্থা করে বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়ার সংস্থান রয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই নানা জটিলতার কারণে ভূমিহীনরা বাড়ি তৈরির আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতেন। তবে রাজ্য যখন নিজের কোষাগার থেকে সম্পূর্ণ টাকা দিয়ে বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছে, তখন ভূমিহীনদের বাড়ি তৈরির বিষয়টিও সুনিশ্চিত করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। প্রত্যেক জেলাশাসককে এ বিষয়ে অবগত করে পঞ্চায়েত দফতরের তরফে বলা হয়েছে, বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার সময় ভূমিহীনদের চিহ্নিত করতে হবে।
সেই তালিকা জমা দিতে হবে অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি রাজস্ব) ও ডিএলএলআরও-দের কাছে। তাঁরাই ওই ভূমিহীনদের বাড়ি তৈরির জন্য জমি চিহ্নিত করে দেবেন। প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “এক্ষেত্রে এক-একজনকে সর্বাধিক ২ কাঠা জমি দেওয়া হয়। সাধারণত এই প্রকল্পের অধীনে বাড়ি তৈরির জন্য ১ কাঠার কিছু বেশি জমি লাগে। আমরা তার চেয়ে কিছুটা বেশি জমিই দেওয়ার চেষ্টা করব। অনেক সময় দেখা যায়, আবেদনকারী বর্তমানে যেখানে বসবাস করেন, তার কাছাকাছি জমি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেসব ক্ষেত্রে উপভোক্তাদের বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে হবে।”
পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যের একজনও ন্যায্য প্রাপক যেন আবাসের সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হন। পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের কথায়, “মোট উপভোক্তার ০.৫ শতাংশ মানুষও যদি ভূমিহীন হন, তাহলে তাঁদের জন্যও সমান গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে।”
তবে নানা অছিলায় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণেও যাচাই পর্ব নিয়ে বিরোধীদের তরফে জটিলতা তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ প্রশাসনের একাংশের পাশাপাশি রাজ্যের শাসক দলেরও। রাজনৈতিক মহলের মতে, কেন্দ্রের ধারাবাহিক বঞ্চনার জবাবে রাজ্য সরকার নিজেই মানুষকে বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়ায় বিরোধী দলগুলির উপর চাপ যথেষ্ট বেড়েছে। সেই কারণে রাজ্যের এই উদ্যোগ সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব তৈরির সবরকম চেষ্টাও চালানো হচ্ছে। নৈহাটি, হাড়োয়া, মেদিনীপুর, তালডাংরা, মাদারিহাট এবং সিতাই বিধানসভায় উপনির্বাচন হবে ১৩ নভেম্বর। ছ’টি কেন্দ্রই গ্রামীণ এলাকায়।
নির্বাচন কমিশন অনুমতি না দেওয়ায় সেখানে যাচাইয়ের কাজ চলছে না। তবে রাজ্যের উদ্যোগের সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত সেখানকার ভোটাররা। আর জি কর কাণ্ডের পরবর্তী পরিস্থিতিতে রাজ্যের এই প্রকল্প জনমানসে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে টের পেয়েই কেউ কেউ আবাস নিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চাইছে বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় যাচাই পর্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ৪ নভেম্বর থেকে পরিদর্শনে পূর্ব বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর হয়ে অন্যান্য জেলায় যাবেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। “উপ নির্বাচন মিটলেই দেখবেন, বাড়ি তৈরির প্রকল্প সংক্রান্ত যাচাই নিয়ে আর কেনও সমস্যা দেখা দেবে না”, আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।