বাংলায় তৃণমূলের কাছে একটার পর একটা নির্বাচনে বিজেপির হারের পর আর্থিক বঞ্চনা করে চলেছে কেন্দ্র। এবার শুরু হয়েছে সারেও বঞ্চনা। যা নিয়ে ব্যাপক ক্ষুব্ধ চাষিরা। তুঘলকি নিয়ম অনুসারে চাষে ব্যবহৃত বিশেষ একটি সার (এনপিকে ১০-২৬-২৬) শুধুমাত্র কেন্দ্রের তরফেই সরবরাহ করা হয় বাংলায়। অন্য জায়গা থেকে তা নেওয়ার উপায় নেই। সম্প্রতি দেখা গিয়েছে সেই সার সরবরাহের পরিমাণ একধাক্কায় অর্ধেক করে দিয়েছে কেন্দ্র। বিশেষ করে আসন্ন আলু চাষের রবি মরশুমে এই সারের সরবরাহ নিয়ে সঙ্কটে পড়েছেন কৃষকরা। এই অবস্থায় ফায়দা তুলছে এক শ্রেণির অসাধু সার ব্যবসায়ী। পরিস্থিতি সামাল দিতে মঙ্গলবার নবান্নে জরুরি বৈঠক করলেন কৃষি ও পঞ্চায়েত দফতরের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং প্রদীপ মজুমদার। ছিলেন কৃষি দফতরের প্রধান সচিব ওঙ্কার সিং মিনা, কৃষি অধিকর্তা-সহ অন্য আধিকারিকরা। ভার্চুয়াল মাধ্যমে উপস্থিত আলু চাষের জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তারাও।
দীর্ঘ দু’ঘণ্টারও বেশি এই বৈঠকে সামনে শীতের মরশুমে পর্যাপ্ত জোগান ও তার বিকল্প ব্যবস্থা নিয়েও পর্যালোচনা হয়েছে। কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে গর্জে উঠে মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, মাঝে মধ্যেই এই ধরনের নানা সমস্যায় আমাদের পড়তে কেন্দ্রের তুঘলকি আচরণের কারণে। একটি তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালে যে সার বাংলায় এসেছে প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ মেট্রিক টন। লক্ষণীয়ভাবে তা কমে গিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা একাধিক পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছি। কেন্দ্রকে বারবার চিঠি দিয়েও কোনও লাভ হয়নি। মন্ত্রীর সংযোজন, সারের ঘাটতির কারণে যাতে কৃষকদের কোনও সমস্যায় পড়তে না হয়, রাজ্য সরকার তা নিশ্চিত করবে। এরইসঙ্গে ই-পজ মেশিনে বাধ্যতামূলকভাবে বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে চাষিদের কাছে সার বিক্রি করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া সার বিক্রির সময় চাষিদের অতিরিক্ত কিছু বিক্রি যাবে না বলেও ব্লকের কৃষি আধিকারিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে তাদের নজরদারি চালানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ২০২১-এর তুলনায় ২০২২-২৩-এ সারের (এনপিকে ১০-২৬-২৬) বরাদ্দ কমে দাঁড়ায় ২.২৭ লক্ষ মেট্রিক টন। এখন বরাদ্দ আরও কমে ২.২৩ লক্ষ মেট্রিক টনে। এই পরিমাণ হলেও তা এখনও রাজ্যে এসে পৌঁছয়নি। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে পঞ্চায়েত মন্ত্রী বলেন, আগে আর্থিক বঞ্চনা ছিল, এখন বাংলার বিরুদ্ধে সমস্ত কিছুতেই বঞ্চনা শুরু করেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার। মন্ত্রীর এনপিকে সারের বিকল্প যে সব সার রয়েছে বিক্রয়কেন্দ্রগুলিতে তার তালিকে ও দাম বাধ্যতামূলকভাবে প্রকাশ্যে লিখে রাখার কথা বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য রাজ্যে বর্তমানে রবিচাষে ৬ লক্ষ ৭২ হাজার হেক্টর কৃষি জমির জন্য ৫ লক্ষ ১ হাজার মেট্রিক টন এনপিকে সারের প্রয়োজন হয়।